
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় ঘুমের ওষুধ ও রসে বিষ মিশিয়ে শিশুকে হত্যাকারী সুস্মিতা দত্তের মা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালত সূত্রে জানা গেছে, ৫ম শ্রেণির স্কুল ছাত্র রোহিত দত্তকে (১১) রসের সঙ্গে বিষ ও ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে হত্যার দায়ে গ্রেফতার হওয়া মা সুস্মিতা দত্ত ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
শনিবার বিকেলে সাতক্ষীরার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতের বিচারক রকিবুল ইসলাম তার ব্যক্তিগত কক্ষে এ জবানবন্দি রেকর্ড করেন। গ্রেফতারকৃত সুস্মিতা দত্ত (৩৩) শ্যামনগর উপজেলার হরিতলা গ্রামের মৃত গোপাল দত্তের স্ত্রী। হরিতলা গ্রামের মনোরঞ্জন রায় গণমাধ্যমকে জানান, তালা উপজেলার কানাইদিয়া গ্রামের মদন মোহন দত্ত তার তিন ছেলে নির্মল দত্ত, উজ্জ্বল দত্ত ও গোপাল দত্তকে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে শ্যামনগরে জুয়েলারি ব্যবসার সুবাদে শ্যামনগরে বসবাস করছেন। কয়েক বছর আগে তারা একটি বাড়ি কিনলেও জামান ট্রেডার্সের মালিকের কাছে বিক্রি করে দেন। এরপর থেকে ওই বাড়িতে ভাড়ায় থাকতেন গোপাল দত্ত। চার বছর আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান গোপাল দত্ত। এরপর গোপাল দত্তের স্ত্রী সুস্মিতা দত্ত তার স্বামীর রেখে যাওয়া টাকা ছেলের লেখাপড়া, বাড়িভাড়া এবং সংসারের খরচ মেটাতে ব্যবহার করেন। অন্য দিকে
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শ্যামনগর থানার উপ-পরিদর্শক খবির হোসেন শনিবার আদালতে সুস্মিতা দত্তের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বরাত দিয়ে গণমাধ্যমকে জানান, স্বামীর মৃত্যুর পর সুস্মিতা দত্ত তার একমাত্র সন্তান রোহিত দত্তকে নিয়ে বসবাস করতেন। পাশের কলেজ শিক্ষক মনোরঞ্জন রায়ের বাড়িতে নকিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। কালীগঞ্জ উপজেলার মৌতলা বাজারের এক প্রসাধনী ব্যবসায়ীকে সাড়ে তিন লাখ টাকা সুদ দিতেন সুস্মিতা দত্ত। এ ছাড়া সুস্মিতা বিভিন্ন ব্যক্তিকে সুদ দিতেন। বুধবার সুস্মিতা মৌতলা বাজারে ব্যবসায়ীর কাছে টাকা আনতে গেলে তিনি টাকা দিতে পারবেন না বলে তাকে তাড়িয়ে দেন। এ ছাড়া ড
অন্য কিছু জায়গা থেকে টাকা সংগ্রহ করতে পারেননি। ফলে ছেলের লেখাপড়ার খরচ, বাড়ি ভাড়া ও সংসারের খরচ কোথায় মেটাবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছিলেন তিনি। শুক্রবার বিকেলের এক পর্যায়ে রোহিত পাশের দোকান থেকে কেনা আমের রসে ২৬টি ঘুমের বড়ি (রিভোট্রিল.৫) ও কীটনাশক অটোমিডা মিশিয়ে পান করে। এতেই মৃত্যু হয় রোহিতের। এ ঘটনায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সুস্মিতার বাড়ি থেকে ঘুমের ওষুধের স্ট্রিপ, কীটনাশক পাতা ও একটি জুসের বোতল উদ্ধার করেন। এ ঘটনায় নিহতের মামা উজ্জল দত্ত বাদী হয়ে শ্যামনগর থানায় সুস্মিতা দত্তসহ অজ্ঞাত ২/৩ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শনিবার বিকাল ৩টায় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে রোহিতের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

0 coment rios: