বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৩

স্ত্রীকে হত্যার পর সোলার প্যানেলের পাইপের মধ্যে ফেলে দেন স্বামী - স্বপ্ন বার্তা

স্ত্রীকে হত্যার পর সোলার প্যানেলের পাইপের মধ্যে ফেলে দেন স্বামী - স্বপ্ন বার্তা

 

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার পোলবাগুন্ডা গ্রামে স্ত্রী ডালিমা খাতুনকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে স্বামী ফন্টু মন্ডল সোলার প্যানেলের পাইপে ফেলে দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) রাত ৯টার দিকে আলমডাঙ্গার রায়লক্ষ্মীপুর গাবতলা মাঠে সোলার প্যানেলের পাইপ থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা।

আলমডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

৩৬ বছর আগে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার নওলামারী গ্রামের মঞ্চন আলীর মেয়ে ডালিমা খাতুনের সাথে একই উপজেলার পোলবাগুন্ডা গ্রামের মৃত ইসলাম মন্ডলের ছেলে ফন্টু মন্ডলের বিয়ে হয়। তাদের দুই সন্তানের মধ্যে মেয়ে সারজিনা খাতুন ও ছেলে জামিরুল ইসলাম কয়েক বছর আগে বিয়ে করেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পোলবাগুন্ডা গ্রামের শের আলীর সাবেক স্ত্রী টগি খাতুনের সঙ্গে ফন্টুর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। বিষয়টি জানাজানি হলে প্রায় এক বছর আগে স্ত্রী টগী খাতুনকে তালাক দেন শের আলী। এরপর ফন্টু মন্ডল ডালিমার নামে একটি এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে টগী খাতুনকে নিয়ে পালিয়ে যায়। ৭ মাস আগে দেশে ফেরেন ফন্টু। তার স্ত্রীকে বলুন যে টগির সাথে আর কোন সম্পর্ক নেই। এরপর সবকিছু ঠিকঠাক চললেও গত মঙ্গলবার বাড়ি থেকে নগদ সাত হাজার টাকা নিয়ে বাগুন্দা বাজারে আসেন ফন্টু মণ্ডল। বাজার থেকে বখশের মাধ্যমে পরকীয়া প্রেমিক টগির কাছে টাকা পাঠান। বাড়ি ফিরে স্ত্রী ডালিমা খাতুন তার স্বামীকে বলে যে সে আগামীকাল কিস্তি পরিশোধ করবে। ফন্টু বলল তার কাছে টাকা নেই। বাসা থেকে সাত হাজার টাকা কিসে খরচ হয়েছে তা নিয়ে উভয়ের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। এরপর স্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন স্বামী ফন্টু।

গত বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে দিনমজুর ফন্টু মণ্ডল তার স্ত্রীকে নিয়ে বের হন। রাতে সে বাড়ি ফিরলেও তার স্ত্রী বাড়ি ফেরে না। ছেলে জামিরুল তার মায়ের কাছে জানতে চাইলেও ভালো সাড়া পায় না। ফন্টু যথারীতি বাড়িতে রাত কাটাল। কিন্তু বৃহস্পতিবার ভোরে তিনি কোদাল নিয়ে মাঠে যান। নিজের জমি না থাকলেও ভোরে মাঠে যাওয়া নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেন অনেকে। সকালে তাকে মাঠ থেকে ফিরতে দেখে গ্রামের অনেকেই তাকে প্রশ্ন করেন। সকালে ছেলে জামিরুল ইসলাম বাবার কাছে মায়ের খোঁজ নেন। অসংলগ্ন কথাবার্তায় তার সন্দেহ হয়। দুপুরের পর ফন্টু মণ্ডল শরীর ঢেকে দেন। এরপরই ছেলে জামিরুল গ্রামবাসীকে নিয়ে মাকে খুঁজতে থাকে। বিকেলে পার্শ্ববর্তী রায় লক্ষ্মীপুর গ্রামের গাবতলার একটি মাঠে রক্ত ও চুল দেখতে পায় গ্রামবাসী।

ওই মাঠে সোলার প্যানেলের পাইপের ভেতরেও শরীরের একটি অংশ দেখা গেছে বলে জানান তারা। পাশে রক্ত আর চুল আছে। খবর পেয়ে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। লাশ উদ্ধারের জন্য ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে খবর দেওয়া হয়। গতকাল রাত সাড়ে ৯টার দিকে পাইপ থেকে লাশ উদ্ধার করে আলমডাঙ্গা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

এদিকে গতকাল বিকেলে ফন্টু মন্ডল তার স্ত্রীর গয়না বিক্রি করতে সরোজগঞ্জ বাজারে আসেন। বিষয়টি জানাজানি হতেই তাকে গ্রেফতার করে সরোজগঞ্জ ক্যাম্প পুলিশ।

সরোজগঞ্জ ক্যাম্প থানার ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) হারুন উর রশিদ (পিপিএম) জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফন্টু মন্ডল তার স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করে বলেন, বুধবার সন্ধ্যার পর স্ত্রী ডালিমকে নিয়ে মাঠে যান। সেখানে সোলার প্যানেলের পাইপের কাছে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তারপর মাথা নিচু করে লাশটি পাইপের মধ্যে রেখে দেয়। লাশ যাতে কেউ দেখতে না পায় সেজন্য তারা পাইপের ভেতর ঘাস ও খড় ফেলে পাইপের মুখ বন্ধ করে দেয়। গতকাল দুপুরে স্ত্রীর কানের দুল বিক্রি করতে সরোজগঞ্জ বাজারে অবস্থান করছেন এমন খবর পেয়ে তাকে আটক করা হয়। রাতেই আলমডাঙ্গা থানায় হস্তান্তর করা হয়।

আলমডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম জানান, অভিযুক্ত ফন্টুকে গতকাল বিকেলে সরোজগঞ্জ বাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে তার স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। বিভিন্ন নারীর সঙ্গে সঙ্গম করতে বাধা দেওয়ায় স্ত্রীকে হত্যার পর সোলার প্যানেলের পাইপে ফেলে দেয়। আজ লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হবে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: